প্রথম পাতা > জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ > জ্ঞান বিজ্ঞানে বাগেরহাট, উন্নয়নে ধরবে হাল, হবেই হবে ডিজিটাল

জ্ঞান বিজ্ঞানে বাগেরহাট, উন্নয়নে ধরবে হাল, হবেই হবে ডিজিটাল


বাগেরহাট ডিজিটাল হবে

বাগেরহাট ডিজিটাল হবে

“জ্ঞান বিজ্ঞানে বাগেরহাট
উন্নয়নে ধরবে হাল
হবেই হবে ডিজিটাল”

এই স্লোগান নিয়ে গত ২ এবং ৩রা অক্টোবর ২০০৯ তারিখে খুলনার বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত হল ২ দিন ব্যাপী “জ্ঞান উৎসব ২০০৯”। এই “জ্ঞান উৎসব” এর আয়োজক ছিল বাগেরহাটের সংগঠন আমাদের গ্রাম এবং সহ আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক। একটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ তৈরির     জন্য এই দুই দিনে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে ছিল নানা আয়োজন যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাগেরহাটের প্রশাসন তথা বাগেরহাটবাসীদের  “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার যাত্রায়  সঙ্গী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা, সাথে বিভিন্ন মহলে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধি এবং ব্যবহারে বাগেরহাটবাসীদের জীবন মানের উন্নয়নের সুযোগের কথা জানান দেওয়া। আর তা করতেই ২ দিনের এই আয়োজনে ছিল র‌্যালি, সেমিনার, কর্মশালাসহ আরও অনেক আয়োজন।

জ্ঞান উৎসব ২০০৯ এ আমি

জ্ঞান উৎসব ২০০৯ এ আমি

ইন্টারনেটের বদৌলতে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে জানতাম অনেক আগ থেকেই। বিশেষ করে ফেইসবুকের কল্যানের অনুষ্ঠানের নিয়মিত আপডেট পেতাম। তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ার কারিগরদের সাথে এবং নিজেও বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে, এ ক্ষেত্রে কাজ করে এমন অনেকের সাথেই পরিচয় রয়েছে এবং যখন জানলাম এদের অনেকেই এ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার এবং একাত্মতা প্রকাশ করার সুযোগটা কোনো ভাবেই হাতছাড়া করতে চাইলাম না, পরিকল্পনা করলাম এবং মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম, যে কোনো মূল্যেই হোক এ অনুষ্ঠানে যাবো।

ব্যক্তিগতভাবে অঙ্কুরের এর সাথে কম্পিউটারের জন্য বাংলা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করি। অঙ্কুর থেকে ইতিমধ্যেই অফিস সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজার, মিডিয়া প্লেয়ার সহ দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় আরও বেশ কিছু সফটওয়্যারের বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি। অন্তত আমি বিশ্বাস করি যা যথাযথ ভাবে বিতরণ এবং সর্ব মহলে ব্যবহারের মাধ্যমে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর পথকে আরও সুগম করবে। কারণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সুবিধা দিতে বাংলা সফটওয়্যারের বিকল্প কিছু হতে পারে না। আর সাধারণ মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সুবিধাগুলোর ব্যবস্থা না করা গেলে, “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কোনো কাগুজে শব্দই থেকে যাবে।

এ কারণে অঙ্কুরকে সফটওয়্যারগুলোর উৎসবে প্রদর্শন করার আগ্রহের কথা জানালে অঙ্কুরের সাধারণ সম্পাদক ম্যাক (মাহে আলম খান) ভাইয়ের সাথে অঙ্কুরের লিফলেট এবং বাংলা সফটওয়্যারগুলো নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মিললো।

র‌্যালীতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে ম্যাক

র‌্যালীতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সাথে ম্যাক

১ তারিখ রাতে আমি আর ম্যাক বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, একেবারে শেষ মূহুর্তে রওয়ানা হওয়ায় কোনো ভাল বাস এর ব্যবস্থা হল। ফলে ঢাকা থেকে বাগেরহাট গন্তব্যে বাসে কোনো সুখকর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে পারলাম না। বাগেরহাটে বাস থেকে নামলাম ভোর ৬টায়। তখনও ডিজিটাল দিনের আলো ফোঁটেনি। রিক্সাওয়ালাকে কোনো আবাসিক হোটেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ডের পাশেই একটি হোটেল দেখিয়ে দিলো। তাতে একটি রুম নিয়ে উঠে পরলাম। যদিও খুব ক্লান্ত ছিলাম কিন্তু হোটেলের বিছানার ব্যবস্থা দেখে আমাদের ২ জনের কারোরই ঘুম এলো না। টিভি দেখে আর ল্যাপটপে ইমেইল দেখতে দেখতেই সকাল ৮ টা বেজে গেলো। দু’জনেই তৈরি হয়ে গেলাম, অনুষ্ঠানের প্রথম আয়োজন র‌্যালীতে অংশ নেওয়ার জন্য, বাগেরহাট শহরের কাছাকাছি যেতেই খেয়াল করলাম স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা। প্রথমেই দেখলাম নির্বাচনী মিছিল হোন্ডাবাহীদের শোডাউন স্টাইলে বাইক (হোন্ডা) সহ স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর শোডাউন। বুঝতে বাকি রইলো না র‌্যালিটি শুরু হয়ে গেছে এবং তা আমাদের কাছাকাছি আসছে। আমরা রিক্সা থেকে নেমে দাড়াতেই দেখলাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সহ আরও অনেকে র‌্যালির প্রথম সারিতে ব্যানার হাতে এগিয়ে আসছেন। পিছনে আরও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ জনগণ। অবাক হলাম এদের পিছনে রয়েছে স্থানীয় স্কুলগুলোর বহু ছাত্র-ছাত্রী। আমরাও তাদের সাথে যোগ দিলাম। ভাবতে ভাল লাগলো “ডিজিটাল বাগেরহাট” গড়ার মিছিলে আমিও শরিক হলাম।

আমাদের গ্রামের রেজা ভাই এবং অঙ্কুরের ম্যাক ভাইয়ের সাথে আমি

আমাদের গ্রামের রেজা ভাই এবং অঙ্কুরের ম্যাক ভাইয়ের সাথে আমি

র‌্যালী করতে করতে আমরা চলে এলাম উৎসবের মূলমঞ্চের কাছাকাছি। ফিতা কেটে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের সহযোগীতায় আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন উৎসবের প্রধান অতিথি। এরপর শুরু হল “স্বপ্নের বাগেরহাট ও ডিজিটাল সেমিনার” যার সঞ্চালক ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। স্টল স্বল্পতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রদর্শনীতে তাদের উপকরণ প্রদর্শন করার আলাদা স্থান পায়নি। অঙ্কুর বাংলাদেশ টেলিসেন্টারের সদস্য হওয়ার সুযোগে তাদের স্টলেই অঙ্কুরের লিফলেট এবং বাংলা সফটওয়্যারগুলোর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা গেল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় দর্শকরা অনেকেই বাংলা সফটওয়্যারগুলো দেখে পুলকিত হলো, অনেকেই এর সুফল সম্পর্কে নিজেরাই মন্তব্য করে গেলেন। সেমিনার শেষে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও  স্থানীয় প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইট (www.dcbagerhat.gov.bd ও http://www.bagerhatpressclub.com) উদ্বোধন করা হল। এরই মধ্যে কথা হল অনলাইন রেডিও লেমন২৪.কম এর প্রধান আবির ভাইয়ের সাথে। তিনি আশ্বাস দিলেন বাংলা উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ তার রেডিওতে পড়ে শোনাবেন।

মূলমঞ্চের এ সেমিনার চলার সময়টাতে বাগেরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হয় গণিত অলিম্পয়াড। একই সময়ে তাদের শিক্ষকরা যোগ দেন ‘গণিত শিক্ষার মানোন্নয়ন’ বিষয়ক একটি কর্মশালায়। একই দিনে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাগেরহাটের রামপালে একটি কমিউনিটি-ই-সেন্টার (টেলিসেন্টার) উদ্বোধন করা হয়, যেখান থেকে স্থানীয় জনগণ তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা পাবে। বিকেলে স্থানীয় প্রেসক্লাবে শুরু হয় ‘অপরাধ দমনে তথ্যপ্রযুক্তি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। একই সময়ে বাগেরহাট বহুমূখী বিদ্যালয়ের মাঠে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা উপভোগ করছিল ওয়াটার রকেট ওড়ানো।

বিটিএন এর স্টলে আমি

বিটিএন এর স্টলে আমি

আমি এর আগেও  বাগেরহাট গেলেও ম্যাকের এখানে প্রথম, তাই আমরা এই অবসর সময়টাতে  বের হলাম বাগেরহাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দেখতে এবং ছবি তুলতে। প্রথমে রিক্সা এবং পরে ভ্যানে বাগেরহাটের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখলাম। খানজাহান আলীর মাজার, ষাটগম্ভুজ মসজিদ, সিংগাইর মসজিদসহ বাগেরহাটের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনগুলোর ছবি তুললাম। ষাটগম্ভুজ মসজিদে গিয়ে নিজেদের এবং দেশ ও দশের ভালর জন্য মোনাজাতও করলাম।

সন্ধ্যায় উৎসব স্থলে আসলাম। উৎসবের মূলমঞ্চে তখন চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীদের গানের শেষে শুরু হয় রূপান্তরের আয়োজনে তথ্য অধিকার নিয়ে পট গান। রাতে শুরু হয় স্থানীয় সাংস্কৃতিক দলের আরও নাচ এবং গানের অনুষ্ঠান।

দ্বিতীয় দিনে সকালেই শুরু হয়, উইকিপিডিয়াতে বাগেরহাটের তথ্য যোগের উপর একটি কর্মশালা। যা অনুষ্ঠিত হয় বাগেরহাট প্রেসক্লাবে। এরপরেই বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ‘স্বপ্নের বাগেরহাট’, ‘ডিজিটাল বাগেরহাট নির্মাণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত বাগেরহাট’   শীর্ষক তিনটি প্রবন্ধ। আর বিকেলে মূল মঞ্চে গণিত অলিম্পিয়াড, দাবা, সুডোকু ও ক্যারম প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২ দিনের এই ‘জ্ঞান উৎসব ২০০৯’।

আমি আর ম্যাকও এরই মধ্যে হোটেল ছেড়ে বেড়িয়ে পরেছি, খুলনার পথে, যদি ভাল কোনো বাস পাওয়া যায়। কিন্তু কপাল খারাপ, ঈদ এবং পূজোর ছুটির পরে বাস গুলোতে বেশ ভীড়। বাধ্য হলাম আবার সেই লক্কর ঝক্কর গাড়ি ধরতে। ৩ তারিখ সকালে ঢাকায় নেমে বাসায় না গিয়ে অফিস করার মধ্য দিয়েই শেষ করলাম আমার জ্ঞান উৎসব সফর।

ব্যবহৃত লিংকঃ

  1. Amit
    অক্টোবর 9, 2009; 2:07 পুর্বাহ্ন এ

    ভাল লাগলো

  1. No trackbacks yet.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান